বাসক
বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম আড়াটোডা
বাসিকা। ভারত উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র এটি জন্মে। হিন্দীতে এক বলা হয় ‘আডুসা’, ‘বানসা’ অথবা
‘ভাসিকা’।
তবে সংস্কৃত নামের ভিত্তিতে এটির ব্যবসায়িক নাম “বাসক”। আর্দ্র, সমতলভূমিতে এটি বেশী
জন্মে। লোকালয়ের কাছেই জন্মে বেশী। হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালায়ক্ত ১ থেকে ২ মি.
উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে। বল্লমাকারের পাতা বেশ বড়। ফুল
ঘন, ছোট স্পাইকের ওপর ফোটে। স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট। স্পাইকের ওপর
পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে। ফুলের দল (কোরোল্লা বা
পত্রমূলাবর্ত) সাদা বর্ণ। তার ওপর বেগুনী দাগ থাকে। ফল সুপারি আকৃতির; বীজে ভর্তি।
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে রোগ নিরাময়ে গাছ-গাছালির পাতা, শেকড় বা ছাল ব্যবহার
করা হতো। সেসব গাছই ছিল আমাদের পূর্বপুরম্নষদের জীবন সাথী। এখনও বাংলার গ্রামে
অনেকেই রোগ নিরাময়ে গাছের রস, পাতা বা ছাল ব্যবহার করে থাকেন। সে রকম দুটি গুণী
গাছের কথা এবার জানানো হলো :
বাসক
একটা
সময় ছিল যখন বাঙালীর জীবনে হরীতকী, আমলকি, চিরতা, বাসকই ছিল বেঁচে
থাকার রসদ। সুস্থতার চাবিকাঠি। আটপৌরে লোকের মুখে ঘুরে
ঘুরে বাসকের নাম পরিণত হয়েছিল 'বসায়।' বাসক শব্দটির অর্থ
সুগন্ধকারক, যদিও তার সঙ্গে এই উদ্ভিতটির কোন সাযুজ্য খুঁজে পাওয় যায় না। তবে দুর্গন্ধনাশক
চর্মশোধক হিসেবে এর ব্যবহার সেকালে বাংলাদেশে ছিল। এখনও মনোহারি দোকানে শুকনো বাসক
পাতা বিক্রি হয়। ছোটখাটো দৈহিক কষ্ট লাঘবের জন্যই এর ব্যবহার স্বীকৃত।
কি করে
চিনবেন
বাসক
মাঝারি মাপের গাছ। গাঢ় সবুজ রঙের উদ্ভিদ এবং চেহারায় তেমন কোন বিশেষত্ব নেই। ৫-৬ ফুট
পর্যনত্ম সাধারণত লম্বা হয় এবং বাংলাদেশের সর্বত্রই মেলে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ছোট
ছোট সাদা ফুল ফোটে। অন্য এক প্রকার বাসক গাছও আছে যাতে হলদেটে লাল রঙের ফুল ধরে।
কি করে
গাছ বসাবেন
বাসক
গাছ ঔষধি বাজারে বা নার্সারিতেও পেতে পারেন। তবে এ গাছ দুর্লভ নয়। পাতা ইত্যাদি
চেনা থাকলে সহজেই নিজে সংগ্রহ করে নেয়া সম্ভব। গাছ বসাতে সাধারণ দোঅাঁশ মাটি
ব্যবহার করম্নন। একটু বড় মাপের টব নিন। পরীৰা করে নেবেন যাতে টবের তলদেশের
কেন্দ্রের ফুটোটি বেশ বড় মাপের হয়। তলার দিকে সামান্য খোলামকুচি বসিয়ে টবটি দোঅাঁশ
মাটি, গোবর এবং পাতাসারের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করম্নন। গাছের ডাল কেটে যদি
বর্ষাকালে পুঁতে দিতে পারেন তাহলে সহজেই তা থেকে চারাগাছ হয়ে যাবে।
যত্ন
বাসক
গাছ প্রায় অযত্নে লালিত গাছ। কেবল মনে করে রোজ বিকেলের দিকে একটু পানি দিতে হবে।
লৰ্য রাখতে হবে যাতে টবের কানায় অর্থাৎ গাছের গোড়ায় পানি না জমে থাকে। রোদ,
পানি,
বাতাস
ঠিকমত পেলে কিছুদিনের মধ্যেই বেশ ঝাঁকাল চেহারা নেবে বাসকগাছটি। তখন সামান্য ছেঁটে
ছেঁটে ক্রমশ একটা দৃষ্টিনন্দন অবয়ব তৈরির চেষ্টা করা যেতে পারে।
ব্যবহার
বাসকের
উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। এর মধ্যে একটি তো সবাই জানে। শিশুর পেটে কৃমি থাকলে
বাসকের ছালের কাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদ কৃমি বের করে দেয়। যাদের হাঁপের টান
আছে তারা বাসক পাতা শুকানো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরম্নট জাতীয় পাকিয়ে তার
সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়। যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক
পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে। এবার একটা কসমেটিক টিপস দিই-যারা বিধাতার
দেয়া গায়ের রঙকে মন থেকে মেনে নিতে পারেন না, তারা রঙ ফর্সা করতে
চাইলে বাসকই তার বন্ধু। বাসক পাতার রস ও দুটিপ শঙ্খচূর্ণ নিয়মিত মাখুন, বৈদ্যরা লিখে গেছেন
রঙ ফর্সা হবেই।আজকাল বড় সমস্যা পানি দূষণ। এমনকি অনেক বাজার চলতি ফিল্টারও নাকি পানিকে সম্পূর্ণ জীবাণু মুক্ত করতে পারে না। কী দরকার ফিল্টারের? এক কলসি পানিতে ৩-৪টি বাসক পাতা ফেলে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি ব্যবহার করলেই হলো। জীবাণু উধাও। শুনলে আশ্চর্য হবেন, এই কয়েক দশক আগে বসনত্মকালে সংক্রমণের আক্রমণ এড়াতে, পুকুরে পুকুরে জমিদারেরা বাসক পাতা ফেলতেন। বাসকের সাহায্যে পানি শুদ্ধিকরণ ছিল সমাজকল্যাণের অঙ্গ।
আমরম্নল
'আমরম্নল'
আমাদের
দেশে শাক নামেই পরিচিত। এটা লৌকিক নাম। মূল নাম হলো চাঙ্গেরি। মনে হয় মূল নামটি
প্রাক-আর্য কোন শব্দ থেকে উৎপন্ন। বাংলাদেশের বহু গ্রামেই অজ্ঞাতে, অস্থানে আমরম্নল
জন্মায়। মুখ্যত তিনটি প্রজাতির গাছই বেশি দেখা যায়।
কি করে
চিনবেন
বাংলাদেশের
প্রায় সর্বত্রই এই শাক জন্মায়। মাটির বুক বেয়ে ওঠে ছোট ছোট উদ্ভিদ, চেহারায় সরম্ন এবং
লতানো। অনেক সময় শুষনি শাকের সঙ্গে গুলিয়ে যায়। শুষনির ডাঁটির মাথায় থাকে। দুটি
পাতা, কিন্তু আমরম্নলের তিনটি। শুষনি স্বাদে টক নয়, কিন্তু আমরম্নল
তিক্ত; কষায় স্বাদযুক্ত। ডাঁটাগুলো ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। চওড়ায় মোটা সুতোর
মতো। ডাঁটার গোড়া থেকে ফুল বের হয়। ছোট হলুদ রঙের ফুল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে
ফুল ও ফল হয়।
কি করে
গাছ বসাবেন
আমরম্নল
নেহাতই বুনো গাছ। প্রায়শই দেখা যায়, পোড়ো জমি ও বাড়ির আনাচে-কানাচে আমরম্নল
ফলে আছে। ছোট ছোট যবের মতো ফল ধরে, যার ভেতরে থাকে বহুসংখ্যক বীজ। সেই বীজ
ছড়িয়ে বা সরাসরি লতা বসিয়ে চওড়া, চ্যাটালো পাত্রে গাছ করম্নন। প্রচুর আলো-
হাওয়াযুক্ত বারান্দায় হ্যাংগিং পস্ন্যান্ট হিসেবেও আমরম্নল রাখতে পাবেন। দেখতে
ভালই লাগবে। আর সেরকম কোন যত্নেরই প্রয়োজন হয় না। নিয়মিত পানিটুকু দিলেই হলো। আর
মাটি জমি থেকে তুলে নিন।
ব্যবহার
বাচ্চাদের
বুকে মাঝে মাঝেই এমনভাবে সর্দি বসে যায় যে বহু চেষ্টাতেও বুক পরিষ্কার হয় না।
সঙ্গে যদি কাশিও থাকে, তবে একবেলা অথবা প্রয়োজনবোধে দুবেলা আমরম্নলের রস
এক চা চামচ পরিমাণে সামান্য গরম করে শিশুকে খাওয়ালে দ্রম্নত উপকার পাওয়া যায়। বসা
সর্দিও উঠে আসে। অনেকে অবশ্য সরষের তেলে আমরম্নলের রস মিশিয়ে গরম করে বা রোদে
তাতিয়ে নিয়ে শিশুর বুকে-পিঠে মালিশ করেন। এটিও স্বীকৃত পন্থা। অনেক সময় কটিদেশে
হাড়ের ব্যথা হয় সে ৰেত্রে আমরম্নল শাকের রস একটু গরম করে দুবেলা দু'চামচ করে খেলে
দ্রম্নত উপকার পাওয়া যায়। তবে আমরম্নলের শ্রেষ্ঠ ব্যবহার অমস্নপিত্ত বা অম্বলের
উপশমে।টক ছুঁতে যারা ভয় পান, তারাও নির্ভয়ে আমরম্নল শাক খেতে পারেন, পেট সুস্থ রাখার এ এক আশ্চর্য দাওয়াই।
বাসকের
ঔষধী গুণ
তাজা
অথবা শুকানো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় “ভাসিসিন” নামীর ক্ষারীয়
পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক
হিসেবে প্রসিদ্ধ । বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে
সুবিধা ক’রে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ
উপকারী। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত: বমির ভাব বা
নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বাসকের ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত
হয়েছে।এর মূল, পাতা, ফুল, ছাল সবই ব্যবহার হয়।
প্রয়োগ
১. বাসক
পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।২. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
৩. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
৪. প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার জলে ফোটাতে হবে।
৬. ২৫ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যায়।
৭. বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
৮. বাসকপাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১চামচসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
৯. পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০ টি থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
ভেষজ
দাওয়াই
* শিশুর
পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদ কৃমি বের হয়ে
যায়।* যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে এর সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।
* যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
*বাসকপাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রং ফরসা হবে।
* এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।
* পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।
* বাসক পাতার রস মাথায় লাগালের উকুন চলে যায়।
* বাসক পাতা বা ফুলের রস এক বা দুই চামচ মধু বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস ভালো হয়।
* শরীরে দাদ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভালো হয়ে যায়।
অন্যান্য
উপকারিতা
বাসকের
পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক
পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড়
ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ
আছে বলে পগুরা মুখ দেয় না। সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের
পাতা বিশেষ উপকারী। 
অনেক ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনPlay online slots at Dr. Dr. Casino
উত্তরমুছুনPlay casino slots and games for real money right from your phone. We 경산 출장안마 provide you 성남 출장안마 with 제주도 출장마사지 the latest casino bonuses, free 서울특별 출장샵 spins, and more! Rating: 4.1 전라북도 출장안마 · 1,542 reviews